মৃত্যুর পর আপনার স্মার্টফোনের কি হবে?

 


মৃত্যুর পর আপনার স্মার্টফোনের কি হবে?

হয়তো কোনো ব্যস্ত দুপুরে, অথবা নিঃশব্দ ভোরের ঘুমভাঙা মুহূর্তে,
জীবন হঠাৎ থেমে যাবে। নিস্তব্ধতা ছেয়ে যাবে চারপাশে।
আপনার ঘর, কাপড়, চায়ের কাপ—সব কিছুই থাকবে আগের মতো।
থাকবে আপনার সেই প্রিয় স্মার্টফোনটিও।
শুধু থাকবেন না আপনি।

আপনি চলে গেলে ফোনটা হয়ে উঠবে এক নিঃশব্দ স্মৃতিফলক।
তাতে থাকবে প্রিয়জনের গলা—কখনো হাসিতে, কখনো অভিমানে ভরা।
থাকবে সেই শেষ সূর্যাস্তের ছবি,
যেটা তুলেছিলেন নীরবে আকাশের দিকে তাকিয়ে।

থাকবে কিছু অসমাপ্ত খসড়া,
যেগুলো হয়তো কেউ কোনোদিন পড়বেই না।
থাকবে হোয়াটসঅ্যাপে রেখে যাওয়া সেই বার্তা—
“পরে লিখছি...” —যা আর কোনোদিনই লেখা হবে না।

একদিন হয়তো আপনার মা কিংবা স্ত্রী তুলে নেবেন সেই ফোনটা,
যেটা প্রতিদিন আপনি হাতে নিতেন ঘুম ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে।
যেটা নিয়ে ঘুরেছেন শহরের অলিগলি,
ধরে রেখেছেন হাসি-কান্নার হাজারটা মুহূর্ত।

হঠাৎ চোখে পড়বে কিছু ছবি—
একটা সেলফি, যেখানে আপনি তাকিয়েছিলেন ভালোবাসার চোখে।
একটা নোট, যেখানে লেখা ছিল—
“ঈদের বাজারের তালিকা” কিংবা “মাকে ফোন দিতে হবে।”
হয়তো খুঁজে পাবে এক অসম্প্রেরিত মেসেজ,
যাতে লেখা— “আমি আসলে খুব একা।”

আপনার সন্তান একদিন বড় হয়ে খুলবে সেই ফোন,
খেলাচ্ছলে দেখবে কিছু পুরোনো ভিডিও।
দেখবে—আপনি তাকে কোলে নিয়ে বলছেন,
“বাবা, তুমি আমার দুনিয়া।”
সেই মুহূর্তে সে বুঝবে—
একটা ফোন আসলে শুধু ফোন নয়,
এটা এক জীবনের কাঁচা দলিল,
একটা মায়ার খাতা।

মৃত্যু অনিবার্য—
তবুও আমাদের উচিত মৃত্যুর পরের জীবনের প্রস্তুতি নেওয়া।
আমাদের স্মার্টফোনে জমে থাকে আমাদের চিন্তা, ভালোবাসা, ভুল আর বিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি।
তাই সেখানে এমন কিছু রাখি,
যা আমাদের মৃত্যুর পরও আমাদের জন্য সওয়াবের কারণ হতে পারে।
এমন কিছু না রাখি, যা প্রকাশিত হলে লজ্জায় মাথা নত করতে হয়।

চলুন, আমাদের স্মার্টফোনকে এমন এক বন্ধুত্বে রূপ দিই,
যে বন্ধুটি মৃত্যুর পরেও সাক্ষী থাকবে আমাদের কল্যাণের পথে।
কারণ মৃত্যুর প্রস্তুতি শুধু জানাজা আর কবরের কাপড়েই নয়—
প্রস্তুতি লাগে আমাদের ডিজিটাল জীবনেও।

( সংগ্রহীত) 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Loading posts...