বিদ্যুৎহীন গ্রাম থেকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল পর্যন্ত ডা. সাইদ সুজনের সাফল্যের গল্প

 




বিদ্যুৎহীন শৈশব থেকে বিশ্বমানের সার্জারি টেবিল পর্যন্ত

বাংলাদেশের শরীয়তপুর জেলার পদ্মার তীরের এক প্রত্যন্ত গ্রাম। সেই গ্রামেই জন্ম নেন ডা. সাইদ সুজন (সাইদুজ্জামান) — যিনি আজ সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের (SGH) একজন রোবোটিক সার্জন ও ইউরোলজিস্ট

যে গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না, সেখানে বড় হওয়া এই ছেলেটির এখনকার অবস্থান সত্যিই অবিশ্বাস্য এক অনুপ্রেরণা। ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে ক্ষেতে কাজ করেছেন, পেঁয়াজ ও টমেটো চাষে সহায়তা করেছেন।

সেই জীবনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন —

“হারিকেনের আলোয় পড়াশোনা করেছি, বর্ষায় নৌকা বেয়ে স্কুলে যেতাম। কিন্তু বাবার একটা কথাই সব বদলে দিয়েছিল — ‘পড়ার জন্য পরিবেশ না, ইচ্ছা জরুরি।’”


সংগ্রামী ছাত্র থেকে চিকিৎসক হওয়ার গল্প

২০০২ সালে এসএসসি পাশ করার পর শহরে পড়ার স্বপ্ন ছিল তাঁর, কিন্তু আবাসনের অভাবে থাকতে হয়েছে গ্রামেই। পরে মাদারীপুরের আবুল হোসেন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট শেষ করে ঢাকায় আসেন কোচিং করার জন্য।

২০০৪ সালে ফার্মগেটের “শুভেচ্ছা কোচিং”-এ ভর্তি হয়ে পরিশ্রমের ফল হিসেবে ভর্তি হন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে
বড় বোন ও দুলাভাই কিছুদিন আর্থিক সহায়তা দিলেও পরে টিউশনি করেই চালিয়ে যান পড়াশোনা।


বিসিএস পরীক্ষার দিনেই বাবার মৃত্যু

এমবিবিএস সম্পন্ন করার পর তিনি একদিকে উচ্চশিক্ষা, অন্যদিকে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
তখন আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল-এ সপ্তাহে দুই দিন সার্জারির মেডিকেল অফিসার হিসেবে কাজ করতেন, যা দিয়ে নিজের ও পরিবারের খরচ চালাতেন।

কিন্তু ঠিক যেদিন বিসিএস লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়, সেদিনই ক্যান্সারে মারা যান তাঁর বাবা।

“সেদিনটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ধাক্কা ছিল, কিন্তু থেমে থাকিনি,” বলেন ডা. সুজন।


উচ্চশিক্ষা ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

পরবর্তীতে তিনি এমএস (ইউরোলজি), এমআরসিএস (MRCS)এফএসিএস (FACS) সম্পন্ন করেন।
২০১৯ সালে তাঁর গবেষণা পত্র দেখে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের একজন ইউরোলজি প্রফেসর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং ফেলোশিপের আমন্ত্রণ জানান।

ফেলোশিপ চলাকালীনই SGH বিভাগ থেকে জব অফার পান তিনি।
আজ তিনি সেখানেই কাজ করছেন একজন ইন্ডিপেনডেন্ট রোবোটিক সার্জন হিসেবে — যেখানে তিনি রোবোটিক সার্জারি, ফোকাল থেরাপি, বায়োপসি ও মিনিমাল ইনভেসিভ ট্রিটমেন্ট পরিচালনা করেন দক্ষতার সঙ্গে।


বিশ্বমানের চিকিৎসক হিসেবে আত্মপ্রকাশ

“বাংলাদেশে রোবটিক সার্জারি করার সুযোগ ছিল না। আল্লাহর কৃপায় আজ আমি সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারছি সিঙ্গাপুরে।”

তাঁর প্রফেসর সম্প্রতি বলেছেন —

“Now, you can practice independently and proudly... But long way to go.”
এই একটি বাক্যই যেন তাঁর জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনা।


কৃতজ্ঞতা ও পরিবার

ডা. সাইদ সুজন বলেন —

“আমার জীবনের এই যাত্রায় অসংখ্য মানুষের অবদান আছে — শিক্ষক, আত্মীয়, বন্ধু, সহকর্মী, আর সবচেয়ে বেশি আমার স্ত্রী ও সন্তান। তাঁদের ভালোবাসা ও সমর্থনই আমাকে প্রতিদিন অনুপ্রাণিত করে।”


উপসংহার

একজন বিদ্যুৎহীন গ্রামের ছেলে থেকে সিঙ্গাপুরের রোবোটিক সার্জন — এই পথচলা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং বাংলাদেশের প্রতিটি স্বপ্নবাজ তরুণের জন্য এক অমলিন অনুপ্রেরণা

আলহামদুলিল্লাহ, ডা. সাইদ সুজন আজ বাংলাদেশের গর্ব, এক জীবন্ত প্রমাণ যে —
“পরিস্থিতি নয়, ইচ্ছাই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।”

কমেন্টে  জানান আপনার অনুভূতি 👇


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Loading posts...