কোরবানির আগে চুল-নখ না কাটার বিষয়ে ইসলাম কী বলে?
ইসলামে কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা প্রতি বছর জিলহজ মাসে আদায় করা হয়। এই সময় একটি সুন্নাত নির্দেশনা আছে যা অনেকেই জানেন না বা গুরুত্ব দেন না—তা হলো, কোরবানির ইচ্ছা থাকলে চুল ও নখ না কাটা।
হাদীসের ভিত্তিতে নির্দেশনা
এ বিষয়ে হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত একটি সহীহ হাদীস আছে:
"যখন তোমরা জিলহজ মাসের চাঁদ দেখো এবং তোমাদের কেউ কোরবানি করার ইচ্ছা করে, তাহলে যেন সে তার চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে।"
— [সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১৯৭৭]
এটি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর স্পষ্ট নির্দেশ, যা কোরবানি দেওয়ার ইচ্ছা থাকলে কোরবানির দিন পর্যন্ত চুল-নখ না কাটার সুন্নত প্রমাণ করে।
এই নিষেধাজ্ঞার হিকমত (হেতু)
এই নিষেধাজ্ঞার পেছনে ইসলামী মনীষীদের ব্যাখ্যা হলো:
- কোরবানির পশু জবাইয়ের মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয় — যেহেতু পশুর প্রতিটি লোম ও অঙ্গের বিনিময়ে আল্লাহ ক্ষমা দান করেন, তাই কোরবানির নিয়তকারী ব্যক্তি যেন তার দেহের একটি অংশও কম না করেন।
- ইবাদতের প্রতি গভীর মনোযোগ ও প্রস্তুতির প্রতীক — এটি আত্মসংযমের একটি রূপ, যা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য অনুসরণ করা হয়।
কারা এই বিধান মেনে চলবে?
এই নির্দেশনা শুধু তাদের জন্য প্রযোজ্য যিনি নিজে কোরবানি দেবেন বা তার পক্ষে কোরবানি দেওয়া হবে। পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য এই বিধান প্রযোজ্য নয় যদি না তারাও আলাদাভাবে কোরবানি দেয়।
যদি কেউ ভুলবশত চুল-নখ কেটে ফেলে?
ইসলামী ফিকহ মতে, যদি কেউ ভুল করে চুল বা নখ কেটে ফেলে, তাহলে তার কোরবানি বাতিল হবে না। এটি নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন হলেও কাফফারা (বিনিময়) দিতে হয় না, তবে তাওবা করা উত্তম।
ইসলামি ফিকহ মতে মতবিরোধ
ইমাম আহমাদ (রহ.) ও ইমাম ইবনে হাযম (রহ.) এই নিষেধাজ্ঞাকে ওয়াজিব (আবশ্যক) বলেছেন। অন্যদিকে, ইমাম শাফেয়ি ও ইমাম আবু হানিফা এই নিষেধাজ্ঞাকে মুস্তাহাব (সুন্নত) বলেছেন, অর্থাৎ পালন করা উত্তম তবে অপরাধ নয়।
ইসলামী স্কলারদের মতামত
ইবনে কুদামাহ (রহ.) বলেন:
"চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকা সুন্নত। কারণ এতে কোরবানিদাতার পশুর সঙ্গে অংশগ্রহণের সাদৃশ্য প্রকাশ পায়।"
উপসংহার
কোরবানির আগের দিনগুলোতে চুল ও নখ না কাটা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত, যা রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে পালন করতেন এবং উম্মতকে নির্দেশ দিয়েছেন। এটি পালন করা আমাদের জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি মাধ্যম।
সোর্সসমূহ:
- সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১৯৭৭
- ফিকহুস সুন্নাহ, সাইয়্যেদ সাবিক
- আল-মুগনী, ইবনে কুদামাহ
- ইসলাম কিউএ (IslamQA.info) — ফাতওয়া নং: ৩৬৪৩২
আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না এবং পোস্টটি অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করুন, যাতে সবাই এই গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত সম্পর্কে জানতে পারে।
লেখক: Mahabubur Rahman
ব্লগ: The Daily 71
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you for your comments.
Our Technical Support team will assist you shortly if required.
Best regards,
Thedaily71